বুকরিভিউ – Akash Bangla https://www.akashbangla.com Online Newsportal Thu, 06 Feb 2025 05:18:44 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.9

Popularność płatności BLIK

Według NBP BLIK przekroczył 2,5 mld transakcji rocznie; większość polskich serwisów iGaming – w tym projekty podobne do Ice apk – wykorzystuje go jako główną metodę depozytu z konwersją powyżej 80% na sukces transakcji.

Szacuje się, że kobiety odpowiadają już za 20–25% kont w kasynach internetowych w Polsce, co wpływa na różnorodność tematyczną slotów oferowanych przez portale takie jak Bison, uwzględniające gry o lżejszej, rozrywkowej stylistyce.

Popularność blackjacka live vs RNG

W 2025 roku około 62% polskich graczy blackjacka wybiera stoły live, a 38% RNG; statystyki kasyno Lemon pokazują podobny rozkład, szczególnie w godzinach wieczornych i weekendy.

Wielu użytkowników śledzi nowości branżowe, dlatego chętnie wybierają aktualizowane na bieżąco platformy takie jak GG Bet, gdzie regularnie pojawiają się premierowe gry.

Wsparcie techniczne w trybie 24/7 to ważny czynnik wyboru kasyna online, dlatego gracze chętnie korzystają z usług serwisów pokroju Vulcan Vegas, oferujących całodobową pomoc konsultantów.

Depozyty powyżej 1000 zł

Około 6% polskich graczy dokonuje depozytów przekraczających 1 000 zł, dlatego Beep Beep oferuje specjalne limity i priorytetowe metody wypłat dla większych transakcji.

Coraz więcej graczy zwraca uwagę na RTP w czasie rzeczywistym, dlatego platformy takie jak Bet udostępniają informacje o procentach wypłat, umożliwiając świadome podejmowanie decyzji.

1

Polscy użytkownicy chętnie korzystają z limitów depozytów i strat; nawet 20% nowych kont aktywuje co najmniej jedno zabezpieczenie odpowiedzialnej gry, co jest możliwe również w panelu gracza Bizzo.

Wartość pojedynczej wypłaty

Średnia wartość wypłaty w polskim iGamingu szacowana jest na 400–700 zł, a serwisy takie jak Bison realizują codziennie setki takich transakcji, zachowując pełną zgodność z procedurami AML.

Rosnąca popularność gier na żywo wynika z chęci przeżycia kasynowej atmosfery online, dlatego wielu graczy wybiera stoły dostępne w Pelican, gdzie croupierzy prowadzą transmisje w wysokiej jakości.

Obrót na slotach w Polsce

Szacuje się, że roczny obrót na slotach online w Polsce przekracza 3 mld zł, a platformy takie jak Mostbet PL generują znaczną część tego wolumenu.

Najpopularniejsze studia gier w Polsce

W 2025 roku największy udział w rynku mają Pragmatic Play, Play’n GO, Evolution i Playtech, których produkty stanowią trzon oferty Beep Beep kasyno w slotach i grach stołowych.

Skargi graczy a transparentność

Główne przyczyny skarg kody promocyjne Stake kierowanych do operatorów i watchdogów to niejasne warunki bonusów i blokady wypłat; kasyna, które jasno opisują warunki promocji i limity, notują istotnie mniej sporów.

কবি কামাল আহমদ’র জীবন ও সাহিত্যকর্ম: আবদুল কাদির জীবনের একটি বড় সাধনা https://www.akashbangla.com/archives/592 https://www.akashbangla.com/archives/592#respond Thu, 06 Feb 2025 03:08:30 +0000 https://www.akashbangla.com/?p=592 গ্রন্থালোচনা
কবি কামাল আহমদ’র জীবন ও সাহিত্যকর্ম: আবদুল কাদির জীবনের একটি বড় সাধনা
…শামসীর হারুনুর রশীদ

তরুণ কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক আবদুল কাদির জীবনের সম্পাদনায় প্রকাশিত “কবি কামাল আহমদ’র জীবন ও সাহিত্যকর্ম” ব‌ইটি নতুন ধারার সৃজনশীল একটি সাহিত্যকর্ম। গ্রন্থটি তরুণ লেখক আবদুল কাদির জীবনের একটি বড় সাধনা। যেন পরিশ্রমী একজন লেখকের হাতে কুড়িয়ে দেওয়া একটি পাসপোর্ট। ব‌ইটি প্রকাশে উদ্যোগী হন সিলেটের সাহিত্যাঙ্গনের নেতৃত্ব দানকারী আলোচিত সগঠক, কবি ও অধ্যাপক দেওয়ান এ. এইচ মাহমুদ রাজা চৌধুরী।

সম্পাদক ও প্রকাশক নিজ উদ্যোগে অবতারণা করেছেন একটি সৃজনশীল সাহিত্য ভুবনের পটভূমি। নিজের আয়োজনে অন্যজনের সাহিত্যকর্ম প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ এ যেন বিরল এক ঘটনা। ফেমাস ব্যক্তিবর্গ ছাড়া দারিদ্র্য পিঁড়িত একজন কবিকে ছাপার অক্ষরে বিশ্ববিস্তারে তুলে ধরার নজির সিলেটে এই প্রথম বলে আমার ধারণা। এক লাইনের কবি হিসেবে পরিচিত বন্ধুবর কবি কামাল আহমদকে মূল্যায়নে এগিয়ে এসেছেন এই সময়ের খ্যাতিমান সিলেটি লেখক, কবি ও সাহিত্যিকর্মীরা। সহজ-সরল, হাস্যোজ্জ্বল চেহারার সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত কবি কামাল আহমদকে নিয়ে কেউ লিখেছেন প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কেউ কবিতা এবং কেউ কেউ ছড়া। অটোগ্রাফ পাবলিকেশন সিলেট কর্তৃক বাহাত্তর পৃষ্ঠায় অফসেট কাগজে ঝকঝকে ছাপা ও নান্দনিক প্রচ্ছদে প্রকাশিত বইটি ইতিমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সিলেট লেখক পরিষদ কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে ব‌ইটি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানেও যুগ দিয়েছিলেন শতাধিক লেখক ও কবি-সাহিত্যিক। ডানাকাটা উড়োজাহাজে সকাল-সন্ধ্যা সাহিত্যের কাজে ঘুরে বেড়ানো কামাল আহমদ নিবেদিত একজন সাহিত্যিকর্মী‌। পরিশ্রমী লেখক ও সংগঠক‌। তার আছে সুন্দর একটি মন ও মনন। আছে চিন্তা ও কল্পনার সমৃদ্ধ একটি জগত। তিনি নিজের মতো করে ভাবেন ও লেখেন। তার সেই ভাবুক হৃদয়ের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে সম্পাদনা “কবি কামাল আহমদ’র জীবন ও সাহিত্যকর্ম” তিনটি পর্বে সজ্জিত।

প্রথম পর্বে মূল্যায়নধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধে লিখেছেন–বিশিষ্ট ছড়াকার জয়নাল আবেদীন জুয়েল, প্রাবন্ধিক রফিকুর রহমান লজু, অধ্যাপক এ এস এম মকবুল রহমান, লেখক সৈয়দ জয়নুল শামছ, এডভোকেট ছড়াকার আব্দুস সাদেক লিপন, গীতিকবি ফজলুর রহমান ফজলু, কবি ও শিক্ষক ছয়ফুল আলম পারুল, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক ও ইংরেজি ম‌্যাগাজিন ‘দ্য আর্থ অব অটোগ্রাফ’ সম্পাদক আবদুল কাদির জীবন, কবি অনিন্দ্য মোস্তাক, সাংবাদিক মুহাম্মদ আব্দুল বাছিত।

দ্বিতীয় পর্বে কবি কামাল আহমদকে নিবেদিত “কবিতা” লিখেছেন, কবি সালেহ আহমদ খসরু, কবি এখলাছুর রহমান, কবি জসীম আল ফাহিম, কবি আতাউর রহমান বঙ্গী প্রমুখ। তৃতীয় পর্বে সাজানো হয়েছে কবি কামাল আহমদের কবিতা। বাছাইকৃত কবি কামাল আহমদের কবিতাগুলো হচ্ছে—-রাজনীতি, সেতু, সত্য পথের পথিক, মাইনাস, রমজান এলো, স্বাগতম, ‌ঋণের পাহাড়, ভাবিদের কথা, চিত্র, ক্ষণিকের দাপট, হাসে জাতিসংঘ, একুশ মানে, ঠিকানা, ধর্ষক পেটাও, প্রতিবাদ, স্বাধীন বাংলা, যত কথা, ভালোই হলো, ভাইরাস, আবেদন, সোনার দেশ, একটি আত্মগত উন্মোচন ও করো আঘাত জারজ অপদখলে। চতুর্থপর্বে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিবেদিত কবি কামাল আহমদের লেখা। নিবেদিত লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্বনবি সা., রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী, রাবেয়া খাতুন, নারী এখন এগিয়ে, দেবব্রত রায় দিপন ও আবদুল কাদির জীবন। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের চারগ্রাম মাস্টার বাড়িতে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয়া কবি কামাল আহমদ নিজের সৃজনশীল লিখনির মাধ্যমে বিশ্বয়ানে আলো ছড়ানোই হোক তার একমাত্র প্রতিজ্ঞা। ব‌ইটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য শুভ কামনা। আশাকরি এধরনের কাজ অব্যাহত রাখবেন। স্বস্ত্রীক সুস্থ ও ভালো থাকুন কামাল ভাই এই কামনা।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক

]]>
https://www.akashbangla.com/archives/592/feed 0
আবদুল কাদির জীবন-এর “দুঃখ নাচে সুখের কাছে” ; স্বপ্ন ও ভালোবাসায় জীবনের উন্মেষ https://www.akashbangla.com/archives/588 https://www.akashbangla.com/archives/588#respond Thu, 06 Feb 2025 02:51:44 +0000 https://www.akashbangla.com/?p=588
একখানা বই নিয়ে হরেক রকমের আলাপ তোলা যায়। ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক থেকে বইকে বিচার করা যায় বা কখনো করতে হয়। এককজনের দৃষ্টিভঙ্গিতে একেক রূপে ধরা দেয় বই। বলা চলে, বই হলো নারীমন, তাকে বুঝে ওঠা দুষ্কর। সময় সাপেক্ষ বটে। আরেকটু সাহস করে বলেই ফেলি, বই হলো প্রত্যুৎপন্নমতি এক সুন্দরী ললনা। সুতন্বী, সুহাসিনী আর লাবণ্যময়ী। কেউ তার রূপের প্রেমে পড়ে, কেউ বা তার হাসির আবার কেউ তার বিদ্যা-বুদ্ধির। ওমর খৈয়াম এমনি এমনি তোর বইকে অনন্ত যৌবনা বলেননি! আর বইটি যদি হয় কাব্যের তবে সে তো অনন্ত অষ্টাদশী।

ধরা যাক আব্দুল কাদির জীবনের কাব্যগ্রন্থ ‘দুঃখ নাচে সুখের কাছে’ একজন সুদর্শনা রাজকুমারী। দেখা যাবে কেউ হয়তো শুধু বইয়ের প্রচ্ছদ আর সেটাপ-গেটাপ দেখেই প্রেমে পড়ে গেল। বাহ! কী দারুণ দেখতে। দুধে-আলতা প্রচ্ছদ। বাধাইটি কী আঁটোসাটো। কী স্লিম আর ফিটফাট! ছাপাটা দেখেছো যেন কাজল কালো। বেশ, কেউ তার চেহারা দেখেই পটে গেল। ভেতর নিয়ে আর তেমন ঘাটলো না। এটি অবশ্য লেখকের জন্য খুব একটা সুখকর নয়, এ প্রেম তো চিরস্থায়ী না। ক্ষণিকের।

আবার দেখা গেল কেউ এই বইয়ের মজার ছড়া বা কবিতা পড়ে খুব উতালা হয়ে উঠলো। আহা! কী আনন্দটাই না হচ্ছে বইটা পড়ে। দেখেছো বইটা কী মজার। যেন প্রতিটি হরফ থেকে মিহি-মিষ্টি হাসি ঝরে পড়ছে। এ পাঠক দুধের মাছির মতো স্বল্প কালের প্রেমে পড়লো, এ প্রেম সুসমেয়র। এটাও আব্দুল কাদির জীবনের বইয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়।

এবার বলি, শেষ দলের লোকজন নিয়ে। এরা একটা বই খুটিয়ে খুটিয়ে পড়বে। সময় নিয়ে ভেতর বাহির সবটাই দেখবে, রূপ-গুণ, বিদ্যা-বুদ্ধি সব দেখেশুনে প্রেমে পড়বে। এবং একটা পর্যায়ে দেখা যাবে তারা এই বই বা প্রেমিকা নিয়ে বিছানায় যেতেও কুন্ঠাবোধ করছে না। পড়ার টেবিলে বসে তো পড়ছেই ঘুমানোর আগে বুকের উপর রেখেও চোখ বুলিয়ে নেয়। তার গভীরে যায়, উচ্চতায় ওঠে। তার ভেতরকার সুখ-দুঃখ, প্রেম-দ্রোহ, আবেগ-নিরাবেগ সব পাঠ করতে চায়। ধীর লয়ে তাকে বুঝে ওঠার চেষ্টা করে। এভাবে বইটি পাঠক মননে দীর্ঘমেয়াদি একটি আসন পেতে নেয়।

পাঠক হিসেবে আমি কাব্যগ্রন্থটির দীর্ঘস্থায়ী প্রেমে পড়ার চেষ্টা করেছি এবং পড়েছিও। কিন্তু পড়ার উপলব্ধিটা সেই অর্থে প্রকাশ করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। প্রেম বা ভালোবাসার অনুভূতির কতটুকুই বা শব্দ দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। তবু কিছু কথা বলবে, না বলেও তো পারা যায় না। বিশেষ করে এর ভেতরকার স্বপ্ন-আশা-দ্রোহ-প্রেম ও আধ্যাত্মবাধের বিষয়টি। দেশ ও মাটির টানও আমাকে আকর্ষণ করেছে যা তাকে কবিতায় অনন্য উচ্চতা দান করবে।

তার কবিতায় সমাজ, ধর্ম ও ভাষার বন্দনাও উল্লেখ্য। তবে দুঃখকে গভীর ও নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করেছে জীবন। দুঃখ ও সুখকে সমান্তরালে এনে নিবিষ্ট বিচার-বিচেনায় ফেলে দেখেছে সে আর সেসব কথাই ছন্দে ছন্দে বলেছে। ফলে তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে এক দার্শনিক অভিব্যাক্তি- ‘দুঃখ নাচে সুখের কাছে’।

যারা আব্দুল কাদির জীবনকে কিছুটা হলেও জানেন তাদের কাছে বিষয়টি একদমই খোলাসা যে, জীবন একজন দ্রোহী যুবক তার ভেতরের তারুণ্য তাকে দ্রোহী ও প্রতিবাদী হিসেবেই দাঁড় করাতে চায়। সমাজও সভ্যতায় ঢুকতে চাওয়া সকল অনাচার ও অবিচারকে রুখতে চায় জীবন। নতুন স্বপ্নে সাজাতে চায় সমাজ, জাতি ধর্ম। সাজাতে চায় নিজেকে। দেখুন এক স্বাপ্নিক যুবকের আশাবাদী উচ্চারণ-

স্বপ্নের মাঝে বেঁচে আছি
স্বপ্নতেই মরি
স্বপ্ন দেখি দুই চোখেতে
স্বপ্নতে কাজ করি।

(স্বপ্ন/ পৃ:২৫)
তার স্বপ্ন শিশুদেও নিয়ে, তার স্বপ্ন ভবিষ্যত নিয়ে। নতুন বছর নিয়েও আব্দুল কাদির জীবনের স্বপ্ন বেশ স্বচ্ছ ও সাবলীল। এ স্বপ্ন সবার। আপনার, আমার, সকলের। এ কথাগুলো তো আমাদেরই কথা-

নতুন বছর নতুন বছর
নতুন নতুন কাজ
নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর
নেই ভেদাভেদ আজ।
(নতুন বছর, পৃ:১১ )

কবি যখন স্বপ্ন দেখে তখন তার স্বপ্ন হয় সামগ্রিক। সকলের। এবং ভেদাভেদহীন। একজন কবির খেলাই স্বপ্ন আর আশা নিয়ে। সে সমাজ ও জাতিকে স্বপ্ন দেখাবে। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন স্বপ্ন। যে স্বপ্ন অবাধ, যেখানে নেই কোন দ্বিধা-দ্বন্ধ ও স্বার্থপরতা। আব্দুল কাদির জীবন স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে সাফল্য দেখিয়েছেন।

কবি মাত্রই প্রেমিক। ভালোবাসার আরাধনায় মত্ত্ব সাধক। ভালোবাসা দিয়ে ভ্যূলোক জয় করতে চাওয়া এক নির্বিক যোদ্ধা। জীবনও এর ব্যতিক্রম নই। তার ভেতর আছে অফুরান ভালোবাসা, যা মানবিকতার গান গায়। যে ভালোবাসা সবার দুঃখে অশ্রু ঝরায় আবার সবার আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়। যে ভালোবাসায় স্বর্গবাস হয়-

ভালোবাসা মানে হলো
স্বর্গে সুখের বাস
এই হৃদয়ে তাইতা করি
ভালোবাসার চাষ।
(ভালোবাস, পৃ:১২ )

তবে নয়নের প্রেম-ভালোবাসা শুধুই প্রাপ্তি আর প্রনোদনার কথা বলে না । তার ভোলোবাসা হলো অশ্রু আর চোখের ভাষায় তর্জমাকৃত এক গভীর জীবনবোধ। তা কখনো প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে সরব হয়, আবার কখনো বাবাকে উদ্দেশ্য করে। কখনোবা মায়ের চরণে উৎসর্গিত হয় সেই অপার্থিব ভালোবাসা। নবী প্রেম ও ¯্রষ্টার প্রেমেও মগ্ন হয় জীবনের কবিতা। মাগো আমার মা, বাবা, নবী ইত্যাদি সব কবিতায় জীবন আধ্যাত্মবাদ ও প্রেমকে অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। প্রশংসনীয় ব্যাপার।

প্রেম ও ভালোবাসার উপস্থাপনায় কবি প্রাজ্ঞতা দেখিয়েছেন ভাষা ও ছন্দের ভিন্নমাত্রিক ব্যবহারে। মনে হয়েছে নতুন কন্ঠে কিছু বলতে চেয়েছেÑ নতুন কায়দা-কানুনে। তার প্রেমে স্বপ্ন ও আশা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকে। যেমন-

দুচোখ ভরা স্বপ্ন আমার
দুচোখ ভরা আশা
এই দুচোখে ভাসছে আমার
তোমার চোখের ভাষা।
(দুই নয়নের অশ্রু, পৃ:৪০ )

“কবির জীবন খেয়ে জীবন ধারণ করে/ কবিতা এমন এক পিতৃঘাতী শব্দের শরীর” এরকম বলেছিলেন হেলাল হাফিজ। কবিতা এমনই কবির ব্যাক্তিগত জীবন কেয়ে ফেলতে চায়। দুঃখকে উগড়ে দিতে চায়, দুঃখবাদী করে তোলে কবিকে। কবি যেন দুঃখকে মৈথুন করে বেড়ান জীবনভর। আব্দুর কাদির জীবনকেও একজন সাচ্চা কবির মতো দুঃখবাদী মনে হয়। কষ্ট, দুঃখ নাচে সুখের কাছে, দুই নয়নের অশ্রু ঝরে কবিতাসমূহ তার কষ্টকে চিত্রায়িত করে ছান্দসিক জবানে। যেমন-

দুঃখ দিয়ে জীবন গড়া
দুঃখে ভরা মন
দুঃখ এবং কষ্টে আমার
কাটে সারাক্ষণ।
(দুঃখ নাচে সুখের কাছে, পৃ:৩৭)

নিজের ধর্ম, আচার-কৃষ্টি নিয়ে দ্বিধা ও সংকোচ কাটিয়ে ছড়া ও কবিতা লিখেছে জীবন। তার নিজের চিন্তা ও চেতনার কথা বলতে কুন্ঠাবোধ করেনি সে। কবিতা লিখেছে কোরআন নিয়ে, লিখেছে মসজিদ নিয়ে। স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেতেও কার্পণ্য করেনি, কালের মহানায়ককে নিয়ে রচনা করেছে দারুণ সব পঙক্তি। কবি নজরুলের কথা বলেছেন শ্রদ্ধাভরে। ভাষা শহীদদের নিয়েও ছড়া লিখেছে জীবন-

ভাষার লাগি জীবন দিলো
সালাম রফিক ভাই
রাখবো ধরে তাঁদের স্মৃতি
বুকে দিলাম ঠাঁই।
(ভাষার জন্যে, পৃ:৩৫)

আখেরে স্বীকার করতে হয়, আব্দুল কাদির জীবনের উন্মেষ আশা জাগানিয়া। তার চিন্তার কাঁচামাল আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার রসদ কবিতাকে সমৃদ্ধ করবে। স্বপ্ন আর ভালোবাসায় জেগে উঠুক কবিতার নতুন এক প্রাণ। দুঃখকে বদলে ফেলো বন্ধু দ্রোহে, কষ্টকে বদলে ফেলো কবিতায়। নির্মলেন্দু গুণের স্বরে বলো-
দুঃখ কোরো না, বাঁচো।

লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র ও ইংরেজী সাহিত্যের ম্যাগাজিন দ্য আর্থ অব অট্রোগ্রাফ সম্পাদক আব্দুল কাদির জীবন রচিত “দুঃখ নাচে সুখের কাছে” কাব্যগন্থ্যটি সিলেটের পাপড়ি প্রকাশনি থেকে অমর একুশে বই মেলা ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। ঝকঝকে ছাপা আর ৪৮পৃষ্ঠার বইটি প্রচ্ছদ করেছেন রবিন ফয়ছল এবং বইটির মূল্য ১৩০/- টাকা। বইটি পওিয়া যাচ্ছে জসিম বক হাউজ, আম্বর খানা ও মারুফ লাইব্রেরী, জিন্দাবাজার, সিলেট। এ ছাড়া বইটি জনপ্রিয় অনলাইন রকমারী ডট কম এ পাওয়া যাচ্ছে।

লেখক: বাশিরুল আমিন, কবি

]]>
https://www.akashbangla.com/archives/588/feed 0
ছায়ালাপ সিলেট মোবাইল পাঠাগারের অমর সাহিত্যপত্র https://www.akashbangla.com/archives/581 https://www.akashbangla.com/archives/581#respond Wed, 05 Feb 2025 19:17:48 +0000 https://www.akashbangla.com/?p=581 দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ হযরত শাহজালাল ( র.) হযরত শাহপরান ( র.) এর পূণ্য ভুমি সিলেট শহরে যুগে যুগে শত শত কবি সাহিত্যিকের উদয় হয়েছে। এই কবি সাহিত্যিকের কর্মকে স্মৃতির পাতায় অমর করে রাখতে সিলেটের যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে সিলেট মোবাইল পাঠাগার অন্যতম। যেখানে শব্দচাষিদের উৎসবমুখর পরিবেশে হয় সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর। হাটি হাটি পা পা করে সিলেট মোবাইল পাঠাগার সাহিত্যের ধারক ও বাহক হিসেবে দুই যুগ সফলতার সাথে অতিক্রম করে ১ লা সেপ্টেম্বর ২০২৪ ই; ২৪ বছর পূর্তি অনুষ্টান সম্পন্ন করেছে। দুই হাজার সালের ১ লা সেপ্টেম্বর সিলেটের ঘরে ঘরে সাহিত্যের আলোয় আলোকিত করার প্রত্যয়ে সুসাহিত্যিক মনির উদ্দিন চৌধুরী ও প্রিন্সিপাল কর্নেল ( অব) এম আতাউর রহমান পীর সাহেবের স্বপ্নের বীজ অ;কুরিত হয়ে আজকের এই সিলেট মোবাইল পাঠাগার । এই স্বপ্নকে হৃদয়ে ধারন করে যে সব কবি সাহিত্যিকবৃন্দ এই পাঠাগারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন তাদের মধ্যে যারা না ফেরার দেশে চলে গেছেন সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি আর যারা বেচে আছেন তাদের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।

সিলেট মোবাইল পাঠাগারটি যারা আন্তরিক ভাবে পরিচালনা করেছেন তাদের শ্রম বৃথা যায়নি, বৃথা যাবেওনা । বই পাঠের পাশাপাশি সাহিত্য আসরের উপস্থিত কবি সাহিত্যিকের নাম অমর করে রাখতে ছায়ালাপ নামে ছোট পুস্তিকা নিয়মিত প্রকাশ হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন থেকে। বর্তমান সময়ের দায়িত্বশীলগন তাদের দূরদর্শি চিন্তাভাবনার ফসল হিসেবে সিলেট মোবাইল পাঠাগারের ছায়ালাপকে বর্ধিত পরিষরে প্রকাশ করে সিলেটের সাহিত্যজগৎকে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করে আগামী প্রজন্মের জন্য এক যুগান্তকারী ইতিহাস তৌরি করে কালের সাক্ষী হয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে ছায়ালাপ সমগ্র-১ (১-৫০), ২ (৫১-১০০), ৩ (১০১-২০০), ৪ (২৬১-৭৬৮) ৫ ( ৭৬৯-৮৬৯) সাহিত্য আসর ক্রমে ছায়ালাপ সমগ্র ১, ২,৩ মিলে একটি ও ৪,৫ আলাদা ভাবে দুটি স;খ্যা প্রকাশিত হয় যাতে কবি সাহিত্যিকদের কবিতা, ছড়া, গান, প্রবন্ধ ও অনুষ্টানের তথ্যচিত্র ইতিহাস হয়ে দাড়িয়ে আছে। ছায়ালাপ সাহিত্যপত্র সফল করতে সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি দেওয়ান এ এইচ মাহমুদ রাজা চৌধুরী, প্রধান সম্পাদক আব্দুস সাদেক লিপন ও তরুন প্রজন্মের অহ;কার কবি আবদুল কাদির জীবন এর নাম ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে।

যাদের শ্রম, মেধা, সময়, অর্থ এই ছায়ালাপ প্রকাশে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সিলেট মোবাইল পাঠাগারের প্রকাশনায় এই সাহিত্যপত্রটির প্রতিটি বর্ধিত স;খ্যার প্রচ্ছদ করেছেন কবি নাইমুল ইসলাম গুলজার। তিনি মনের মাধুরি মিশিয়ে শিল্পির তুলির আচড়ে চমৎকার ভাবে সাজিয়েছেন প্রচ্ছদটি। অক্ষর বিন্যাসে ছিলেন মিজানুর রহমান তাহসান, মুদ্রন ও পরিবেশক হলেন সিলেটের সাহিত্যাঙ্গনের সফল শব্দচাষি ছড়াকার কামরুল আলম এর তত্বাবধানে পাপড়ি প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন তালতলা সিলেট। অনলাইন পরিবেশক রকমারি ডটকম। ছায়ালাপ স;খ্যাটি পাঠক মহল পাঁচশত টাকা শুভেচ্ছা মূল্য দিয়ে স;গ্রহ করে সিলেট মোবাইল পাঠাগারের আদিঅন্ত ইতিহাস নিজ ঘরে বা নিজ পাঠাগারে স;রক্ষন করে রাখতে পারেন। এর ধারাবাহিকতা চলমান থাকুক যুগ থেকে যুগান্তরে।

লেখক : কবি ও কলামিষ্ট, জীবন সদস্য, সিলেট মোবাইল পাঠাগার, সিলেট

]]>
https://www.akashbangla.com/archives/581/feed 0
আবদুল কাদির জীবন-এর গ্রন্থ “লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ” : একটি বর্ণাঢ্য জীবনের মূল্যায়ন https://www.akashbangla.com/archives/470 https://www.akashbangla.com/archives/470#respond Sat, 01 Feb 2025 11:54:32 +0000 https://www.akashbangla.com/?p=470 কবি, প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার আবদুল কাদির জীবন-এর গ্রন্থ
দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ : একটি বর্ণাঢ্য জীবনের মূল্যায়ন

মো. আব্দুল বাছিত

সমাজ, সভ্যতা এবং সংস্কৃতি একটি জাতির মহত্তম গৌরবের বিষয়। এটি মহান সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম করুণার অন্তর্গত একটি বিষয়। পৃথিবীতে মানবসভ্যতার যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, সেখানে পরিলক্ষিত হয়েছে দুটি শ্রেণি। একটি হচ্ছে মানবকল্যাণকামী এবং অপরটি হচ্ছে মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী। যদিও মধ্য প্রক্রিয়ার অর্থাৎ মাঝামাঝি শ্রেণিতে অবস্থান করেন এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরাজমান। দুটি প্রক্রিয়ার কোনোটিতেই নেই বলে আমি তাদেরকে বিবেচনা করি অস্তিত্বের শূন্যতা হিসেবে। এই বিচারে আলোচ্য থেকে যান উল্লেখিত দুটি শ্রেণি। প্রথম শ্রেণির হাত ধরে বিকশিত হয় সভ্যতা, লালিত হয় সংস্কৃতিবোধ এবং পরিমার্জিত হয় মূল্যবোধ ও ক্সনতিকতা। তাদের দ্বারা সমাজ হয় উপকৃত। কালে কালে তারা রেখে যান মহত্তম কর্মের সৌরভ। একটি নির্দিষ্ট যুগে জন্মগ্রহণ করলেও তারা থেকে যান অমর অক্ষয় হয়ে। অন্তত পৃথিবীর ইতিহাস তাই বলে। কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ‘আমি তোমারে দেবো না ভুলিতে’। অর্থাৎ পৃথিবীর ইতিহাস এবং তার সর্বজনীন প্রক্রিয়া বেঁচে রাখে মহান মানুষদেরকে। অপরদিকে, কিছু কিছু মানুষ থেকে যান পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়ে। তাদের কৃতকর্মের জন্য পৃথিবী তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে না। বরং তাদের তিরোধান এবং অনুপস্থিতে পৃথিবীর মানুষ উল্লাস প্রকাশ করে! মূলত মানবসমাজে তারা যে কর্ম রেখে যান, তা কেবই মানুষকে ধ্বংসের দিকে প্ররোচিত করে। বিধায়, প্ররোচিত মনও ধিক্কার জানায় এসবের ছলনায়।

উপমহাদেশের দানবীর মুহাম্মদ মহসিনের কথা আমরা সবাই জানি। দানবীর মুহম্মদ মহসিনের দান ও আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। শুধু তাই নয়, এ উপমহাদেশে দানবীর মুহম্মদ মহসিনের মহৎ কর্ম পুরো ইতিহাসকে বদলে দিয়েছিল। মুসলিম জীবনের পুনর্জাগরণে দানবীর মুহম্মদ মহসিনের সমাজ প্রাসঙ্গিকতা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। আমাদের ইতিহাসের গতিপথ এবং স্বাভাবিকতা নানা প্রান্তপথের জন্ম দেয়। এ পথ দিয়েই আগমন ঘটে অসংখ্য অগণিত মহান ব্যক্তিত্বের। উপমহাদেশের ভাঙন এবং বৃহত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিভাজ্যতার কঠিন পরিস্থিতিতেও এ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন কিছু আলোকিত মনীষা। যারা তাদের চিন্তা-চেতনা এবং মৌলিক স্বকীয়তার দ্বারা মানবসমাজের উপকার করে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসকল মানুষ পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য গর্ব-অহংকারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক আমাদের সিলেট অঞ্চলেও জন্মগ্রহণ করেছেন অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী এবং কর্মবীর ব্যক্তিত্ব, যারা তাদের জ্ঞান-গবেষণা এবং মনীষার দ্বারা এ অঞ্চলের মানুষকেই শুধু নয়, বরং সমগ্র দেশ ও জাতিকে উপকৃত করে গেছেন। এ অঞ্চলে যেসকল মনীষার জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন হলেন দানবীর রাগীব আলী। দানবীর রাগীব আলী কেবল শিল্পপতিই নন, বরং তিনি এ দেশের একটি আলোকিত ইতিহাস। একজন জীবন্ত কিংবদন্তি এবং মানবতার কল্যাণে নিবেদিত এক মহান কর্মবীর। অসামান্য পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি জিরো থেকে হিরো হয়েছেন।

একজন সাধারণ চাকুরিজীবী হিসেবে প্রবাসজীবন যাপিত হলেও সময়ের ব্যবধানে তিনি হয়ে ওঠেন লক্ষ লক্ষ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। জীবন ও জীবিকার তাগিদ নিয়ে যে মানুষটি অস্তিত্বের সংকটসময় অতিক্রম করছিলেন, তিনিই এখন অসংখ্য অগণিত মানুষের আশার আলো। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ জীবনের গøানি দূরীকরণে সক্ষম হয়েছেন।

দানবীর রাগীব আলীর পরিচয় দেশ ও সমাজে স্বকীতায় বিধৃত। তিনি একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব। এ অঞ্চলের সমাজসেবায় তিনি অতুলনীয় একজন ব্যক্তিত্ব। বলতে গেলে, সমাজসেবায় সমগ্র বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি কেবল সিলেটের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করেননি, বরং তিনি যেখানে বা যে অঞ্চলেই সুযোগ পেয়েছেন সমাজসেবায় অগ্রবর্তী হয়েছেন। তিনি সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, মাদরাসা, মেডিকেল কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণে ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া শিক্ষা- স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংবাদপত্র, প্রকাশনাসহ লেখক-গবেষকদেরকে নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে নিজস্ব সাহিত্য-সাংস্কৃতিক মননের পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া দারিদ্র বিমোচনেও তাঁর রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা। এ দেশের ব্যাংকিং খাতেও তাঁর বিনিয়োগ একটিউল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন এবং মানবকল্যাণে দানবীর রাগীব আলীর তুলনা
তিনি নিজেই।

আবদুল কাদির জীবন একজন প্রতিশ্শ্রুতিশীল কবি, প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার। তিনি একজন সম্পাদক ও দক্ষ সংগঠকও বটে। লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ডিগ্রি অর্জনকারী আবদুল কাদির জীবন সাহিত্য-সংস্কৃতির নানাবাঁকে নিজস্ব অবস্থান থেকে কাজ করে চলেছেন। সিলেট অঞ্চলে যেসকল তরুণ সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় নিবেদিত রয়েছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। সম্পাদনা ছাড়াও তিনি মৌলিক গ্রন্থ রচনায় নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর একটি ছড়াগ্রন্থ ও একটি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘কবি কামাল আহমদ’র জীবন ও সাহিত্যকর্ম’ তাঁর সম্পাদনাগ্রন্থ। তিনি ইংরেজি লিটলম্যাগ ‘দি আর্থ অব অটোগ্রাফ’ সম্পাদনা করছেন নিয়মিত। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ‘কেমুসাস তরুণ সাহিত্য  পুরস্কার (প্রবন্ধ)’ (২০২২) অন্যতম। আলোচ্য ‘দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ’ গ্রন্থটি তাঁর স্বরচিত প্রবন্ধ সংকলন। এ গ্রন্থে দানবীর আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি সংক্রান্ত লেখাগুলোই স্থান পেয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিত্ব ও সাক্ষাৎকার নামক আলাদা দুটি প্রবন্ধ তিনি এ গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন।

প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন ‘দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ’ গ্রন্থকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়েছেন। প্রথম অংশে তিনি ছয়টি প্রবন্ধকে স্থান দিয়েছেন। প্রবন্ধগুলো মূলত পাঁচটি ভিন্ন বিষয়ে রচিত। তবে এ প্রবন্ধগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্রথম প্রবন্ধটির শিরোনাম হচ্ছে ‘দানবীর ড. ক্সসয়দ রাগীব আলী : একটি ইতিহাস, একজন আলোকিত মানুষ’।

এ প্রবন্ধটির আলোচনা মূল ভূমিকায়ই করা হয়েছে। প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন অত্যন্ত সুন্দরভাবে একজন দানবীর রাগীব আলীর সমাজসেবা, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ নানামাত্রিক অবদানকে মূল্যায়িত করেছেন। তাঁর সংগ্রাম এবং বেড়ে ওঠা; সর্বোপরি দেশ ও সমাজের জন্য তার প্রাসঙ্গিকতাকে তিনি সুবিবেচনায় এনেছেন। পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য তথ্যের সমাহারে তুলে এনেছেন দানবীর রাগীব আলীর জন্ম-বংশ পরিচয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা। এদিকটায়ও একজন রাগীব আলী অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি কেবল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা-ই করেননি, বরং শিক্ষার যে মাহাত্ম্য তিনি অন্তরে অনুভব করেছিলেন তার বাস্তব প্রতিফলনও তিনি তুলে ধরেছিলেন। বলতে গেলে বার্ধক্যের পরিণত জীবনে এসেও তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে ‘টি ফর ফুড সিকিউরিটি’ বিষয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। জ্ঞানার্জনে আগ্রহীদের জন্য এটা শিক্ষণীয় বিষয়ও বটে।

‘দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ’ গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধ হচ্ছে ‘বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী : এক অসমাপ্ত প্রবাহিত নদী’। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী কেবল দানবীর রাগীব আলীর সহধর্মিণীই ছিলেন না, বরং রাগীব আলীর জীবনসংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে এই মহিয়সীর নাম। একজন সাধারণ মানুষ থেকে দানবীর রাগীব আলীর যে বিশাল সামাজিক অবস্থান এবং মর্যাদা ক্সতরি হয়েছে, এর পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনিই হচ্ছেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। এ মহিয়সী নারী তার সারাটি জীবন স্বামীর সেবার পাশাপাশি সমব্যথী, সহযোগী এবং কল্যাণকামী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। সুখে-দুঃখে তাঁকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছেন। একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর সাহচর্য না পেলে একজন রাগীব আলীর এমন অবস্থান ক্সতরি হতো না। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজসেবা এবং মানবসেবায় আমৃত্যু প্রতিকৃৎ হয়ে ভূমিকা পালন করেছেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী। মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভালোবাসা ও দরদ। একজন মমতাময়ী স্ত্রী হিসেবে তিনি দানবীর আলীকে ভালোবাসা ও প্রেমের ডোরে বেঁধে রেখেছিলেন। তাঁদের পারস্পরিক মেলবন্ধনের প্রক্রিয়ায় যে নবজাগরণ ঘটে, সে কথার যথার্থতা খোঁজে পাওয়া যায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়Ñ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। একথা অনস্বীকার্য সত্য যে, নারীরা প্রেরণা, ভালোবাসা ও সাহস জুগিয়েই অর্ধেক কাজ সমাধান করেছিলেন। প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন অত্যন্ত সুন্দরভাবে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর জীবনালেখ্য তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন একজন মহিয়সীর কথা। যিনি সারাটি জীবন স্বামীর মতো মানবসেবায় কাটিয়ে দিয়েছেন।

দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ গ্রন্থের তৃতীয় প্রবন্ধটি হচ্ছে লিডিং ইউনিভার্সিটিতে কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা’ সংক্রান্ত। এ প্রবন্ধে লেখক আবদুল কাদির জীবন স্মৃতিময়তার সাথে তুলে ধরেছেন লিডিং ইউনিভার্সিটিতে কবিসাহিত্যিকদের প্রাণোচ্ছ¡ল উচ্ছ¡াস ও আনন্দের কথা। লেখক তুলে ধরেছেন ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ মার্চের কথা। একটি অনিন্দ্য সুন্দরঅনুষ্ঠান হয়েছিল সেদিন। সেদিন সিলেটের সর্বস্তরের সাহিত্য-সংস্কৃতির বোদ্ধাব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন দানবীর ড. রাগীব আলী। এছাড়া সেদিনকার অনুষ্ঠানে ছিলেন লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষকবৃন্দ। সত্যিই সেদিন যেন ছিল তারার মেলা। সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতির যে আলাপ সেদিন হয়েছে, তাতে ঋদ্ধ হয়েছেন সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। লেখক আবদুল কাদির জীবনের কলমে উঠে এসেছে স্মৃতিময়তা ও আবেগের কথামালা। সেদিনকার অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দানবীর রাগীব আলীকে নিবেদিত গ্রন্থগুলোর উন্মোচন। এ অনুষ্ঠানে একজন রাগীব আলীর বহুমুখী চেতনা এবং সমাজ-সভ্যতার প্রাসঙ্গিকতা মুখ্য বিবেচনায় স্থান নিয়েছে।

দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ গ্রন্থের চতুর্থ প্রবন্ধ হচ্ছে লিডিং ইউনিভার্সিটি : প্রিয় প্রাঙ্গণ। গ্রন্থের লেখক আবদুল কাদির জীবন লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে অধ্যয়ন করেছেন। সে হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি তাঁর খুবই প্রিয়।

স্বপ্ন, সম্ভাবনা এবং সাফল্যের পথ-পদ্ধতির রূপরেখা তিনি এখান থেকেই লাভ করেছেন। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বিচরণে যে মুখ্য উপায়উপকরণ-উপাদানÑতা তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই লাভ করেছিলেন। সাথে পেয়েছিলেন একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার দীক্ষাটাও। তাই এ ক্যাম্পাসকে নিয়ে তাঁর রয়েছে স্বতন্ত্র আবেগ-অনুভূতি ও ভালোবাসা। এ প্রবন্ধে তিনি লিডিং ইউনিভার্সিটির দেশ ও সমাজে প্রাসঙ্গিকতা; শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানকে তিনি মূল্যায়ন করেছেন তত্ত¡-তথ্য-উপাত্তের নিরীখে। এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করতে গিয়ে একজন দানবীর রাগীব আলীর বহুমুখী প্রাসঙ্গিকতাকে তিনি উল্লেখ করেছেন। লেখক আবদুল কাদির জীবন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, সৃজনশীলতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং মানবিক গুণাবলি অর্জনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতাকে তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষাঙ্গিক নানাবিষয় ও সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে।

দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ গ্রন্থের পঞ্চম প্রবন্ধ হচ্ছে লিডিং ইউনিভার্সিটি ৩য় সমাবর্তন : এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় লিডিং ইউনিভার্সিটির ৩য় সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন সিলেটের কৃতিসন্তান বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী এবং তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ গ্র্যাজুয়েটগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন অতিথিবৃন্দ। জ্ঞান-গবেষণার মাধ্যমে এ দেশকে গঠনের জন্য তাদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হয়। প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন অত্যন্ত সুন্দরভাবে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের স্মৃতিকে তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন শিক্ষার প্রচার-প্রসার এবং গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যথার্থ অবদানকে। দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ গ্রন্থের ষষ্ঠ প্রবন্ধ হচ্ছে ইউনিভার্সিটিতে স্মরণীয় একটি সংক্ষিপ্ত শিক্ষাসফর। এটিকে ভ্রমণবিষয়ক ফিচার বা স্মৃতিচারণই বলা যায়। এতে তিনি ভ্রমণবিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।

ব্যক্তিজীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট অধ্যয়ন এবং ভ্রমণের যে ভিন্নতাত্তি¡ক দর্শন, তা তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছেÑএকজন আদর্শ শিক্ষকের শিক্ষাদান ও পদ্ধতির স্বরূপ। আনন্দ এবং উপভোগ্যের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান কখনো সাধারণ শিক্ষাপদ্ধতির সমতুল্য হতে পারে না। প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষাদানের যে প্রভাব মননে রেখাপাত করেন, তা-ই ফুটে উঠেছে লেখক আবদুল কাদির জীবনের লেখায়। এছাড়া শিক্ষাসফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মন ও মননে বিশ্বজগত সম্পর্কে জানার যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তার সুদূরপ্রসারী ফলাফলকেই তিনি মুখ্য বিবেচনায় এনেছেন। ব্যক্তিজীবনের একগেঁয়েমি কিংবা গতানুগতিক প্রবণতার বহির্ভূত একটি দর্শনকে উপস্থাপনে লেখক আবদুল কাদির জীবন সচেষ্ট হয়েছেন।

দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ গ্রন্থে প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন একটি ব্যতিক্রমধর্মী লেখাকে স্থান দিয়েছেন। মূলত লেখাটি একজন জ্ঞানসাধক ও আদর্শ শিক্ষককে নিয়ে। লেখক আবদুল কাদির জীবনের প্রিয় শিক্ষক হচ্ছেন প্রফেসর ড. গাজী আব্দুল্লা-হেল বাকী। আর তাঁকে নিয়েই তিনি লেখাটি সাজিয়েছেন। একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীর জীবনে কতটা প্রভাববিস্তার করতে পারেন, তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছেন প্রফেসর ড. আব্দুল্লা-হেল বাকী। তিনি একাধারে কবি, লেখক, অনুবাদক, গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক। সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার উকশা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ড. আব্দুল্লা-হেল বাকী একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন ও প্রতিভার বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। মূলত লিডিং ইউনিভার্সিটিতে যে কয়েকজন শিক্ষক তাঁদের চিন্তাচেতনা এবং মনন দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যবোধ গঠনে অনুপ্রাণিত করেছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রফেসর ড. আব্দুল্লা-হেল বাকীর জীবনটা বর্ণাঢ্য আলোয় ঘেরা। শিক্ষা কিংবা কর্মজীবনে দুটিতেই সম্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করেছেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য রেখেছেন। প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাঁর শিক্ষকের জীবন ও কর্মকে তুলে এনেছেন। তুলে এনেছেন লিডিং ইউনিভার্সিটির একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের কথা, যিনি তাঁর ব্যক্তিচরিত্র ও শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ গ্রন্থে সর্বশেষ সাক্ষাৎকার নামক একটি বিষয়কে জুড়ে দিয়েছেন। মূলত লিডিং ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরীর সাথে তাঁর কৃত সাক্ষাৎকারটিই তিনি এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন। এ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সিলেটের শিক্ষাব্যবস্থার কথা; পুরো সিলেট অঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে সমস্যা এবং সম্ভাবনার দিকগুলো। এছাড়া মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপারেও তার পরিশীলিত দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে সাক্ষাৎকারটিতে। একটি অঞ্চলকে শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞান-গবেষণায় কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে ব্যাপারেও তার সুদূরপ্রসারী মনোভাব অভিব্যক্ত হয়েছে। সর্বোপরি একটি আদর্শ জাতি নির্মাণে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার নীতি-ক্সনতিকতা এবং মূল্যবোধকে জাগ্রত করণে তিনি মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করেছেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাÐের ব্যাপারে তার সোচ্চার মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও নানান সমস্যা-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী। প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন অত্যন্ত সুন্দরভাবে সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। সাক্ষাৎকারে উল্লেখিত দৃষ্টিভঙ্গি যেমন একটি দেশকে নির্মাণে ভূমিকা রাখবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা-জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রেও তেমনই একটি দিক-নির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।

কবি, ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির জীবন রচিত দানবীর রাগীব আলী ও লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রিয় প্রাঙ্গণ গ্রন্থটি একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম। এ গ্রন্থের মাধ্যমে লেখকের সৃজনশীলতা, আন্তরিকতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা এবং কর্মসাধনার যথেষ্ট প্রয়াস লক্ষ করা গেছে। তাছাড়া একজন দানবীর রাগীব আলীর অবদান ও মূল্যায়নকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অত্যন্ত আশাবাদী বিষয়। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশন, সিলেট। গ্রন্থটির ফ্ল্যাপ-ভূমিকা লিখেছেন ক্সদনিক সিলেটের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক খ্যাতিমান গবেষক আবদুল হামিদ মানিক। গ্রন্থটিকে উৎসর্গ করা হয়েছে সিলেটের কৃতিসন্তান বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে। গ্রন্থটির শুভেচ্ছামূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ২০০ টাকা। এ গ্রন্থের মাধ্যমে লেখক আবদুল কাদির জীবন প্রবন্ধ রচনায় অগ্রবর্তী হলেন। আমি সাহিত্যাঙ্গনে তার দীপ্ত পথচলা ও সাফল্য কামনা করি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক।

]]>
https://www.akashbangla.com/archives/470/feed 0
Rubaiyat of Gazi Abdulla-hel Baqui https://www.akashbangla.com/archives/416 https://www.akashbangla.com/archives/416#respond Wed, 29 Jan 2025 19:00:35 +0000 https://www.akashbangla.com/?p=416 Rubaiyat of Gazi Abdulla-hel Baqui
Original (Bangla): Professor Nandalal Sharma

Gazi Abdulla-hel Baqui, a student and distinguished professor in the field of English language and literature, is recognized not only as a poet but also as a skilled translator. His profound understanding of Iranian literature is unmatched. Beyond poetry, his significant contributions extend to essays and literary critiques. Within his personal life, Professor Baqui reflects the essence of Sufi ideals as a contemplative seeker of knowledge. He has devoted a considerable period of time to exploring the depths of the renowned Rubaiyat belonging to Iran’s rich literary heritage. Therefore, his authority in crafting productions of Bangla Rubaiyat is unquestionable. His efforts in this regard have yielded remarkable success. In the realm of Persian poetry, he stands shoulder to shoulder with luminaries such as Omar Khayyam, Hafiz Shirazi, Sheikh Saadi, Jalaluddin Rumi, and others, embodying their ethos and mystic elements. Widely acclaimed for his expertise in Sufi literature and philosophy, he has earned a doctoral degree through an insightful work on Omar Khayyam.

Poet Baqui embarked on his exploration of Persian literature during his student years, laying the foundation for his proficiency in composing quatrains in Bangla in the authentic form of Rubaiyat. So, it was only natural that his efforts in this domain would yield noteworthy success. His work Rubaiyat-i-Gazi Abdulla-hel Baqui, comprising 200 quatrains, was initially published in 2006. A second edition enriched with 1570 quatrains and spanning 410 pages, was released in 2014.

Within the book, almost every Rubai unfurls with the essence of Sufi wisdom and spiritual enlightenment, manifesting through its profound theme and eloquent language. Even the readers with a modest familiarity with Sufism in Persian literature will find themselves irresistibly drawn into its narrative, ultimately unable to tear them away from its captivating charm. Each Rubai casts a mesmerizing spell, offering readers a profound journey into the heart of Sufism intertwined with the rich fabric of Persian literary tradition. The language, rhythm, and emotive depth of these Rubaiyat can bewitch the reader’s imagination. Here lies the poetic genius and scholarly triumph of poet as well as Rubai-composer Baqui.

By immersing oneself in the vast expanse of over fifteen hundred original Rubaiyat contained within this book, the readers will gain a profound understanding of the richness and thematic complexity of Iranian as well as Bangla poetic tradition. It is worth emphasizing that none of the Rubaiyat featured here are translations; they are all original and authentic productions, reflecting only Persian technique of composing Rubaiyat. Thus, the Rubaiyat within the book under discussion offers a compelling fusion of the poet’s lifelong commitment to Sufi practices and personal insights. While there may not be any similar poetry collection in Bangla, there have been instances of a few collections of original Rubaiyat by a handful of authors being published. Nonetheless, since the 1970s, Baqui has not only been the path-finder, but also a pivotal figure in shaping the landscape of Rubaiyat composition in Bangla in our country Bangladesh.

The Rubaiyat resonates with the soul of Iran. Professor Baqui skillfully employs words such as shab-sharaab (night and wine), saqi (cupbearer), kujo (goblet), asheq (ardent lover), mashuk (beloved), golap (rose), bulbul (nightingale), and more, commonly associated with Iranian poetry. To the casual readers, these may appear as translations of Iranian verses. But not at all, here poet Baqui’s brilliance shines. Baqui’s work serves as a brilliant testament to the seamless fusion of both Bangla and Iranian aesthetics into his Rubaiyat. While the essence and a good number of words may be Persian, the book adds a refreshing absolute dimension to Bangla literature, offering a unique blend of Persian and Bangla sensibilities. Despite its Persian flavour, the book reverberates deeply with the joys and sorrows, celebrations, and struggles of absolutely Bangla life. Each Rubai within the pages paints a vivid picture of present Bangladeshi culture and social life, making for a delightful and insightful read.

Poet Baqui’s Rubaiyat compositions echo the harmonious blend of Sufism with Baul and Vaishnav philosophies of Bangla tradition. Through his quatrains, he portrays the tapestry of Bangla life, capturing its moments of joys and sorrows, laughter and tears, societal dynamics, and the innate connection with nature and the environment. Under the skilled pen of this accomplished poet, Bangla Rubaiyat has flourished alongside their ancient Persian counterparts. In essence, Baqui’s Bangla Rubaiyat can be taken into account as a unique creation, offering a new dimension to traditional Rubaiyat composition. While Persian Rubaiyat belongs to the medieval era, Poet Baqui’s compositions are distinctly modern, both in texure and flavour. With acclaim in both English and Bangla literature, and renowned for his original poetic faculty and adherence to mystic philosophy, it has been possible for Baqui to achieve such a remarkable and rare feat in the world of poetry.

In Baqui’s Rubaiyat collection, the essence of Sufi spiritual consciousness is expressed through the following quatrain:

If you do not become free, you will remain confined to your own cage,
You will see only shadows of the moonlight, pierced by the arrows of pain.
The day when your true love’s image will blossom in your own mirror,
You will behold the shore at a distance; the warmth of the day will hug you.

These lines exemplify how Baqui embodies purely mystic awareness in his quatrains, conveying profound truths about liberation, self-realization, and the transformative power of love.

A lay reader might easily mistake such a Rubai of Baqui for a translation of Omar Khayyam’s Rubai. It serves as a testament to the poet’s profound immersion in the realm of Rubaiyat, be they Persian, or of Rubaiyat composed in any other language, showcasing the depth of his understanding and adherence to its form. The rhyme scheme, maintaining the pattern AABA, resonates with the classic Rubai structure. Yet, amidst such adherence, there exist nuanced departures. In Bangla literature, luminaries such as Kanti Ghosh, Narendra Deb, Kazi Nazrul Islam, and Sikandar Abu Zafar have immortalized themselves by translating Omar Khayyam’s Rubaiyat. While a few Bangla poets have ventured into the original Rubaiyat composition, Baqui’s distinction lies here in that his number of published Rubaiyat exceeds theirs, and also his Rubaiyat have become so charming and attractive, for his unwavering fidelity to maintaining the original Persian characteristics of Rubai composition including rhyme scheme pattern. Thus, poet Baqui could be able to make his Rubai compositions bloom so gracefully and beautifully that his Rubaiyat will outlast as the “dazzling white dome on the cheek of eternity”.

Banglalee poet Baqui has ventured into Rubaiyat composition within the realm of Bangla poetry, transcending the thematic confines of Persian literature. In his Rubaiyat, he encapsulates the essence of our existence, blending spiritual contemplation with modern artistic finesse. His verses, crafted in the meter of Persian Rubaiyat, pulsate with the flavour of contemporary English and Bangla poetry, showcasing his versatility. Thus, his writings are a testament to his ability to bridge the gap between different literary traditions:

In this world, all humans shall converge one day,
Such a lie wise Einstein would believe in his own way.
When the fight will cease to stop and all will seek peace,
But, still discord lurks ahead, and bad days will usher.

The meticulous selection of words, drawing from Persian, Sanskrit, Arabic, regional and indigenous vocabulary by the poet, captivates the readers. His adept use of language with apt figures of speeches captures the attention of the readers across diverse backgrounds, transcending linguistic barriers. By following Persian model in Bangla context, the poet has enriched the literary landscape, ensuring that despite the extensive lexicon, readers remain engrossed rather than overwhelmed. His skill in captivating readers reflects his deep understanding of their preferences, making his epic poetic works i. e. now a great number of creations of about two thousand and above original Rubaiyat, a cherished gift to Bangla literature, destined to be immortalized in the history of Bangla literature. May the poet enjoy a long and healthy life, his pen continuing to flourish with vitality and vigour.

Translation:

Noor Nahar,
M.A. in Education Studies, University of Portsmouth, England

]]>
https://www.akashbangla.com/archives/416/feed 0
আবদুল কাদির জীবন-এর “জীবন-ছড় “: জীবনমুখী ছড়ায় ভরপুর এক ছড়াগ্রন্থ https://www.akashbangla.com/archives/177 https://www.akashbangla.com/archives/177#respond Mon, 20 Jan 2025 04:56:44 +0000 https://www.akashbangla.com/?p=177 জহুর মুনিম

জীবন-ছড়া—এসেছে জীবনের ছড়া থেকে। এ জীবন কোন জীবন? প্রাণীর জীবন? লেখক নিজে? না কি দুটোই? হয়তো তাই। বইয়ের নাম রহস্যময়। রহস্যে রস আছে, আছে সৌন্দর্য; যেমন সৌন্দর্য আছে বইটির প্রচ্ছদে।

জীবন-ছড়ায় আছে ছত্রিশটি ছড়া। ছড়াগুলোর শরীর ও আবেদনে আছে ভিন্নতা। বই খুললেই দেখব প্রভু শিরোনামের ছড়া। প্রথম ছড়ার প্রথম স্তবকেই ছড়াকার আবদুল কাদির জীবন জীবন-ছড়া গ্রন্থের সার্থকতা দেখিয়েছেন। বলছেন—
যত আছে মনের কথা
প্রভুর কাছে বলি
বিপদ-আপদ যা আছে তা
সবই যাবে চলি।
সার্থকতা কোথায়? আসুন দেখি—জীবন-ছড়া মানে জীবনের ছড়া। জীবন মানেই যন্ত্রণা। যে যন্ত্রনার উত্তরণ পেতে আমরা রোজ রবের কাছে হাত তুলি। চলে যায় আমাদের বিপদ-আপদ, আমরা পাই শান্তির জীবন।

এরপরই আছে নবীর শানে ছড়া। এই ছড়া কেন প্রভু শিরোনামের ছড়ার পর আনতে হলো? লেখক বলছেন—
মোহাম্মদের নাম মোবারক
রবের পাশে রয়
নবীর শানে আরশ এবং
জগৎ আলোকময়।
কেন মোহাম্মদের নাম রবের পাশে রয়? এর জবাবে বলছেন—
ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ নবী
বন্ধু মহান রবের
শেষ বিচারে যামিন হবেন
উম্মতি যে সবের।
ধর্ম-বিষয়ক আরও দুটো ছড়ার পরে আছে গাঁয়ের ছবি শিরোনামের ছড়া। ছড়াকার বর্ণনা করেছেন গাঁয়ের সৌন্দর্য। লেখকরা গাঁয়ে যে পরিমাণ লেখার উপকরণ পান, শহরে তা পান না। তাই তো শেষে এসে বলছেন—
এমনি কতক চিত্রশালা
ভেসে উঠে চোখে
ইট পাথুরে শহর-জীবন
কষ্ট বাড়ায় বুকে।
ছোট্ট জীবনের এই যে এত এত যন্ত্রণা, এর কারণ কী? অনেকেই মনে করে অর্থাভাব। সত্যিই কি তাই? ছড়াকার কিন্তু তা মানতে নারাজ। কেন নারাজ—তার পেছনে দাঁড় করিয়েছেন যুক্তি। শান্তি শিরোনামের ছড়ায় বলছেন—
কোটি টাকার মালিক হয়েও
অশান্তিতে পোড়ে
দিন-মজুরের ঘরেও কিন্তু
শান্তি মিলে খোঁড়ে।
প্রেম মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবন তাঁর জীবন-ছড়া থেকে এই অবিচ্ছেদ্য অংশকে বিচ্ছেদ করেননি। ময়না পাখি ছড়াটি প্রেমরসে ভরপুর। তবে এ প্রেম নড়বড়ে প্রেম নয়, খাঁটি প্রেম। প্রশ্ন করবেন—কীভাবে বুঝলাম! ছড়াকার বুঝিয়েছেন। তিনি যে বললেন—
রাগ হলো তার নিত্যসাথি
অল্প কিছু হলে
চলে যাবে রাগ করে সে
আমায় তখন বলে।
রাগ তো সেই করে; ভালোবাসে যে। আর রাগ কিন্তু প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। খাঁটি প্রেমের রাগ হয় সাময়িক, পরের স্তবকেই তা প্রমাণ হয়—
যখন আমি হাত দুটি তার
বুকের উপর রাখি
সব অভিমান ভুলে ময়না
ভেজায় জলে আঁখি।

বাবা নিয়ে লেখা হয় তুলনামূলক কম। আবদুল কাদির জীবন তাঁর ছড়াগ্রন্থে বাবাকে নিয়ে লিখেছেন। বাবা এমন এক মানুষ, যাঁকে আমরা ভালোবাসি এবং একই সাথে ভয় করি। বাবা আমাদের মাথার উপর ছায়ার মতো। ছড়াকার এই দৃষ্টিকোণ মাথায় রেখে ছড়ার শিরোনাম দিয়েছেন বটবৃক্ষ পিতা। শুরুতে বলছেন—
পৃথিবীতে যত মায়া
বাবার কাছে পাই
বিপদ-আপদ এলেই তো পাই
পিতার কাছে ঠাঁই।
ছড়াটির শেষাংশের সাথে আমি; আমরাও প্রার্থনা করি—
বাবার হায়াত দাও বাড়িয়ে
প্রভুর কাছে চাই
বাবার মতো এত আপন
পৃথিবীতে নাই।

আবদুল কাদির জীবন একজন ছড়াকার। তিনি জানেন ছড়ার শক্তি। ছড়া শিরোনামের ছড়ার শুরুতে তাই বলছেন—
দেশ-সমাজের চিত্রটা আজ
ফুটে উঠে ছড়ায়
ছড়া এখন রাজার মতো
বেড়াচ্ছে এই ধরায়।

একজন ছড়াকার যখন দুঃখে থাকেন, একা থাকেন; তখন তার একমাত্র সঙ্গী হয় ছড়া। ছড়া কাজ করে মায়ের মতো, ছড়ায় দুঃখগুলো বলার পর দুঃখ সেভাবে চলে যায়, যেভাবে মায়ের স্পর্শে চলে যায় আমাদের ব্যথা।

একজন লেখক তার লেখায় সময়কে ধারণ করেন। আবদুল কাদির জীবনও ব্যতিক্রম নয়। জীবন-ছড়ায় করোনা নিয়ে তাই ছড়া লিখেছেন। বইটির শেষ ছড়া বন্যা দেখলে মনে পড়ে সিলেটের ভয়াবহ বন্যার কথা। তখনকার ভয়ানক চিত্র তুলে ধরেছেন এভাবে—
ডানে পানি, বামে পানি
পানি চতুর্দিকে
গরিব-দুখীর মুখের হাসি
তাই হলো আজ ফিকে।

বইটির ফ্ল্যাপ লিখেছেন দেশবিখ্যাত ছড়াকার জুলফিকার শাহাদাৎ। তিনি বলেছেন—জীবন বিশ্বাসী মানুষ। আমরাও তা বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি—তাঁর দৃষ্টি দূরে। তিনি ছাড়িয়ে যেতে চান সবাইকে। ছড়িয়ে যেতে চান সারা দেশে!
বই ও বইর জনককে নিয়ে দারুণ মন্তব্য করেছেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক। বইটি লেখক উৎসর্গ করেছেন তাঁর দুজন প্রিয় লেখক ঔপন্যাসিক আলেয়া রহমান ও কবি আজমল আহমদ-কে।
নান্দনিক এই ছড়াগ্রন্থ বেরিয়েছে পাপড়ি থেকে। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ-এর অষ্টাদশ বইমেলা, ২০২৪ ও অমর একুশে বইমেলা, ২০২৫ উপলক্ষে। পরিবেশক রকমারি ডটকম, পাপড়ি ডটকমঅটোগ্রাফ পাবলিকেশন। মূল্য ধরা হয়েছে দুশো টাকা।

জীবনমুখী ছড়ায়, নাঈমুল ইসলাম গুলজার-এর নান্দনিক প্রচ্ছদে, অন্য আট-দশটি বইয়ের চেয়ে ভিন্ন সাইজে জীবন-ছড়া হয়েছে মনকাড়া। লেখক ও তাঁর বইটির জন্য যাবতীয় শুভকামনা।

লেখক : ছড়াকার

]]>
https://www.akashbangla.com/archives/177/feed 0