সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেছেন, নতুন বাংলাদেশে মানুষকে সেবা দিতে হলে সুশাসন অপরিহার্য। তিনি বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম পাথেয় হচ্ছে জনবান্ধব ভূমিসেবা। ভূমিসেবাকে জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ভূমিসেবাসমূহ অটোমেশনসহ নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।তিনি বলেন, সরকার ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।সরকারী নতুন অফিসারদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদেরকে ডিজিটাল এক্সপার্ট গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।
খান মো. রেজা-উন-নবী শনিবার (২৪ মে) বিকেলে তিন দিনব্যাপী দেশব্যাপী ভূমি মেলা-২০২৫ উপলক্ষে
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, সিলেটের উদ্যোগে বিভাগীয় পর্যায়ে ভূমি মেলা বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।”নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি” শ্লোগানকে ধারণ করে সিলেট সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে মেলার সার্বিক বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার বক্তব্য রাখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিত সিংহ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হোসাইন আল জুনায়েদ, সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খুশনুর রুবাইয়াত ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড ও ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের সহযোগিতায় ২৫-২৭মে পর্যন্ত ভূমি মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেস কনফারেন্সে বলা হয়, ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করতে ভূমি মন্ত্রণালয় নানা রকম ডিজিটাল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৫ থেকে ২৭ মে ২০২৫ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ভূমি মেলা-২০২৫ আয়োজন করা হচ্ছে। কবি নজরুল অডিটোরিয়াম, রিকাবীবাজার, সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য এই মেলায় সাধারণ মানুষ ভূমি সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা পাবেন একই ছাদের নিচে।
এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল ভূমি সেবা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং সরাসরি সেবা প্রদান করা। মেলায় বিভিন্ন সেবা বুথ থাকবে, যেখানে নাগরিকরা ই-নামজারি আবেদন, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ, মৌজা ম্যাপ দেখা, ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিল ইত্যাদি সেবা পাবেন। এছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ভূমি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা এবং সাধারণ মানুষের জন্য গণশুনানি ও ভূমি আড্ডার আয়োজন করা হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। নাগরিকরা এখন www.land.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি ইউজার আইডি দিয়ে ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা পাচ্ছেন। জমি রেজিস্ট্রেশনের পরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা মানুষের ঝামেলা কমাবে। স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে স্মার্ট ভূমি নকশা, যা নামজারির সাথে সাথে আপডেট হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ এই প্ল্যাটফর্মে ভূমি সংক্রান্ত আইনি তথ্য ও পরামর্শ পাওয়া যাবে।
সারাদেশে ১০৪৩টি আধুনিক ইউনিয়ন ভূমি অফিস তৈরি করা হয়েছে এবং আরও ১৩৩৩টি অফিস নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া ১৫০টি উপজেলায় পাঁচ তলা বিশিষ্ট সমন্বিত ভূমি অফিস তৈরি করা হবে, যেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার একসাথে কাজ করবেন।
ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমাতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যেমন : ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২৩ ও ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩। এছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস জানাতে রাজধানীর ভূমি ভবনে একটি ভূমি যাদুঘর তৈরি করা হচ্ছে, যা শীঘ্রই চালু হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে জমি ক্রয়ের সাথে সাথে মালিকানা সনদ দেওয়া, ভূমি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা ও সম্পূর্ণ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও স্থানীয় ভূমি অফিসগুলোর সমন্বয়ে আয়োজিত এই মেলা ভূমি সেবাকে মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দেবে। মেলায় সাধারণ মানুষ তাদের ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান পাবেন এবং নতুন ডিজিটাল সেবা সম্পর্কে জানবেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই ডিজিটাল রূপান্তর ও জনবান্ধব সেবা প্রদানের উদ্যোগ বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
প্রেস কনফারেন্সে সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি গোলজার আহমদ হেলাল,দৈনিক প্রভাতবেলা সম্পাদক কবির আহমদ সোহেল সহ স্থানীয় প্রিন্ট,ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।