প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ১৭ বছরের তরুণীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেছে গোলাপগঞ্জ থানার উজান মেহেরপুর গ্রামের একদল বখাটে অপরাধীরা।
এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর গত ১৩ এপ্রিল তরুণীর মা রছনা বেগম বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে জানা যায়, গত ৬ মার্চ বিকাল আড়াই টার সময় উজান মেহেরপুর গ্রামের কয়েকজন বখাটে তরুণ যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে তরুণীর ঘরে অনুপ্রবেশ করে তরুণীর শরীরে ঝাপটে ধরে মাথার চুল ছিড়ে এবং তরুণীর শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো ক্ষুর দিয়ে আঘাত করে। এই আঘাতের ক্ষত চিহ্ন নিয়ে প্রাণ ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গত ২০২৪ সালের এসএসসি পাশ এই তরুণী। এসব অপরাধীদের ভয়ঙ্কর নিষ্টুর নির্যাতনসহ নানা ভাবে হুমকির কারণে মেয়েটিকে আর কলেজে ভর্তি করা যায়নি।
মেয়েকে সন্ত্রাসীদের নির্যাতন থেকে বাচাঁতে গিয়ে মেয়ের পিতা তাজ উদ্দিন তাজন (৬০) কে বেধড়ক মারপিটে নির্যাতন করে বখাটে অপরাধীরা। এসময় তাজ উদ্দিনও রক্তাক্ত জখম হন। তাতে মেয়ে ও পিতা উভয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এখন মেয়েটির পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।
এলাকায় মুরব্বিদের কাছে বিচার প্রার্থী হয়ে বিচার পায়নি মেয়ের পক্ষ। বরং এলাকার প্রভাবশালী মুরব্বিরা অপরাধীদের পক্ষ নেওয়ায় নির্যাতিত তরুণীর পক্ষ দিশেহারা হয়ে তরুণীর মা রছনা বেগম বাদী হয়ে গত ১২ মার্চ সিলেটের আমল গ্রহণকারী ২নং গোলাপগঞ্জ আদালতে ৫ জন অপরাধীর নাম উল্লেখ করে আরো ৫-৬ জনকে আসামী করে মামলা রুজু করেন। মামলা নং- সি.আর- ১৩৯/২০২৫। মামলাটি বর্তমানে সিলেট পিবিআই পুলিশ আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে।
গত ১০ এপ্রিল সিলেট পিবিআই পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর নাসিমার নেতৃত্বে একদন পুলিশ টিম ঘটনাস্থল তদন্ত করে আসে। মেয়ে পক্ষের আরো একটি অভিযোগের ভিত্তিতে একই দিন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার দারগা (এসআই হান্নান) ঘটনাস্থল তদন্তে যান। তারা উভয় টিম ঘটনাস্থল পৃথক পৃথক ভাবে তদন্ত করে ফিরে আসার পর এলাকার বখাটে সন্ত্রাসীরা মেয়ের বাড়ি ঘরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালায়।
উভয় পুলিশ টিম পৃথক ভাবে ঘটনাস্থলে তদন্ত চলাকালীন সময় অভিযুক্ত বখাটে সন্ত্রাসীরা উপস্থিত হয়ে বেআইনি উগ্র কার্যকলাপ শুরু করে। তাদের ভয়ে তরুণী নির্যাতনের ঘটনার স্বাক্ষীরা স্ব-শরীরে ঘটনাস্থলে স্বাক্ষী দিতে প্রাণ ভয়ে আসেনি। অপরাধীরা অস্ত্রাঘাতে মেয়ের হাতের একটি আঙ্গুল কেটে ফেলেছে। মেয়ের পড়নের কাপড় চোপড় ছিঁড়ে ফেলে। এমন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন এলাকার মানুষ আর কখনো দেখেনি।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার দারগা হান্নান ঘটনাস্থল তদন্ত করে তরুণীর নির্যাতনের বিষয়টি কয়েকদিন পর অস্বীকার করে মেয়ের মাকে উল্টো মিথ্যা মামলায় ফাসানোর ভয় দেখিয়ে বিদায় দেন। মেয়ের মা থানায় গিয়ে মামলা রেকর্ড হয়েছে কিনা খবর জানতে গিয়ে দারগা হান্নান এরূপ আচরণ করেন। এর আগে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অপর দারগা রসুল একই অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল তদন্ত করতে যান। সেখানে থানার উভয় দারগা তদন্ত করতে গিয়ে নির্যাতিত সুন্দরী মেয়েকে দেখে তারা দুজনেই পৃথক ভাবে মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। এতে মেয়ের মা রছনা বেগম সেসব পৃথক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় কোন ধরনের নিরাপত্তা মূলক সেবা পাননি বলে জানিয়েছেন মেয়ের মা রছনা বেগম।
গত ৮ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার সময় নির্যাতিত মেয়েটি নিজ বসত ঘরের পাশের টিউবওয়েলে অযু করতে যায়। সেখানে অপরাধীরা মেয়েকে ঘিরে ধরে মেয়েটির শরীরে বেদম মারপিটে জখম করে। এসব ঘটনায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় রছনা বেগম বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করলে দারগা হান্নান ঘটনাস্থল তদন্তে গিয়ে বিবাদীদের সাথে গোপন আতাত করে থানায় এসে মেয়ের অভিযোগটিকে মিথ্যা বলে প্রচার করেন। ফলে নির্যাতিত পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। মেয়েটি স্থানীয় এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে গত ২০২৪ সালে মেধা তালিকায় এসএসসি পাশ করে। বিজ্ঞপ্তি